Tindu Bandarban

তিন্দু বান্দরবান

Bandarban

Shafayet Al-Anik

·

২২ জুলাই, ২০২৪

তিন্দু বান্দরবান পরিচিতি

তিন্দু বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। তিন্দুকে বলা হয় বাংলাদেশের স্বর্গ। তিন্দুরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি সাঙ্গু নদী। পাহাড়, মেঘ, নদী, ঝর্ণা, রহস্য এবং রোমাঞ্চ সবই এখানে একত্রে পাওয়া যায়, যা তিন্দুকে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ করে তুলেছে। এখানে শঙ্খ নদীর স্বচ্ছ পানি কঠিন পাথরের সাথে সারাক্ষণ বয়ে চলেছে। এখানে আপনি পাহাড়ের পানিতে ডুব দিয়ে এবং সারাদিন নতুন মাছের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারেন। স্থানীয় আদিবাসীদের সরলতা এবং আতিথেয়তা দেখে আপনি অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। সকাল-বিকেল মেঘে ঘেরা পাহাড়। মেঘমেলা দেখলে যে সময় কেটে যাবে টেরই পাবেন না। তিন্দুরের অসাধারনতা বাড়াবাড়ি করা যায় না।
অঞ্চলটি তার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমী পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত। আর তাই আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে দেশের মধ্যে এই অনন্য অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগটি মিস করবেন না। এছাড়া নাফাখুম ঝর্ণা এখন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্থান। নাফাখুম যাওয়ার পথে তিন্দুতে যেতে পারেন অথবা চাইলে থাকতে পারেন।

কখন যাবেন

আপনি বছরের যে কোন সময় তিন্দু পরিদর্শন করতে পারেন। তিন্দু এবং এর আশেপাশের পরিবেশ একেক সময় একেক রূপে ধরা দেবে। আপনি যদি বর্ষাকালে যান, আপনি পাবেন ঝড়ো সাঙ্গুর চেহারা এবং মেঘের আনাগোনা, একইভাবে আপনি যদি শীতকালে যান, আপনি সাংখ নদীর চারপাশে জমাট মেঘ এবং কুয়াশার চেহারা দেখে মুগ্ধ হবেন।

তিন্দু যাবার উপায়

তিন্দু যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান জেলা সদরে আসতে হবে। তারপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদী পার হয়ে তিন্দু বাজার।

ঢাকা থেকে বান্দরবান

ঢাকার কলাবাগান, সয়দাবাদ, গাবতলী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আপনি রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে যেকোনো বাসে করে সহজেই বান্দরবান পৌঁছাতে পারবেন। এসব নন-এসি ও এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়া যায় এবং সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ, মহানগর ইত্যাদি ট্রেন প্রতিদিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। ক্যাটাগরি ভেদে ভাড়া হবে ৪০৫-১৩৯৮ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান

চট্টগ্রামের বাড্ডারহাট বাস স্টেশন থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। পূবালী ও পূর্বাণী নামে দুই বাদা রওনা হলো বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। এই দুটি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। এছাড়া ধামপাড়া বাসস্টপ থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে বান্দরবান যেতে পারেন, মাইক্রোবাস ভাড়া 2,500-3,500 টাকা।
বান্দরবান থেকে থানচি বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার দুটি পথ আছে; বাসে বা রিজার্ভ জিপে। বান্দরবানের থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে এক ঘণ্টা পর একটি লোকাল বাস থানচির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি 200 টাকা, সময় লাগবে 4-5 ঘন্টা। রিজার্ভ জীপ/চান্ডারের খরচ পড়বে 5,500-6,000 টাকা এবং সময় লাগবে 3-3.5 ঘন্টা। একটি গাড়ি 12-14 জন সহজেই বহন করতে পারে। থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক ও নীলগিরি যাবে। এই দীর্ঘ পাহাড়ি যাত্রা চারপাশের আদিম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আপনার চোখ ও মনকে সতেজ করবে।
থানচি থেকে তিন্দু থানচি পৌঁছানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি গাইড ঠিক করতে হবে। গাইড ছাড়া তিন্দু ট্যুরে যাওয়া যায় না। উপজেলা প্রসিকিউশনের অনুমতি থাকলে তাকে গাইড হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। এক রাত থাকার জন্য গাইড ফি ১৫০০ টাকা। আর দিনের বেলায় গিয়ে একই দিনে ফিরে এলে গাইড ফি ৮০০ টাকা। আপনি গাইড ঠিক করতে থানচিতেও যেতে পারেন অথবা আপনার পরিচিত একজন গাইডের সাথে কথা বলে ঠিক করতে পারেন। গাইড ঠিক করার পর আপনাকে থানচি বিজিবি ক্যাম্প/থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। সব ভ্রমণকারী সদস্যদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কোথায় যাবেন, কতদিন থাকবেন তা কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। এবং আপনার গাইড এই কাজে সাহায্য করবে।
অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করতে হবে। এক নৌকায় ৪-৫ জন যাওয়া যায়। তিন্দু পর্যন্ত ইঞ্জিন বোট ভাড়া রিজার্ভ যাওয়া এবং পরের দিন ফেরত সহ 3,000-3,500 টাকা। আর রাতে না থেকে একই দিনে ফিরে এলে নৌকা ভাড়া ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। থানচি থেকে নৌকায় তিন্দু যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে। সাঙ্গুতে পানি কম থাকলে নৌকা থেকে নেমে কিছু জায়গায় হেঁটে যেতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। পথে সাঙ্গু নদীর রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়া

তিন্দুতে থাকার ব্যবস্থা আদিবাসীদের বাঁশ-কাঠের মাচাং বাড়ি এবং ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যদের তৈরি বাংলোতে। আর আপনি চাইলে তাঁবু দিয়ে ক্যাম্পিং করে রাত কাটাতে পারেন। সেখানকার আদিবাসীদের বাড়িগুলো খুবই পরিপাটি এবং অতিথিপরায়ণ। খাওয়ার হোটেল নেই কিন্তু যেখানে থাকবেন তারা রান্না করবে। আপনি চাইলে থানচি থেকে বাজার থেকে নিয়ে আসতে পারেন, তারপর নিজে রান্নার আয়োজন করতে পারেন। উপজাতীয় বাড়িতে দৈনিক বাসস্থান খরচ জনপ্রতি 150 টাকা এবং আপনি খাবারের জন্য প্রতি ঘন্টা 100-150 টাকা খরচ করবেন। শঙ্খ নদী থেকে আনা তাজা মাছ বা পাহাড়ি মুরগি, ডাল ও আলু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

আশেপাশে আর কি দেখবেন

কুমারী ঝর্ণা তিন্দু বাজারের কাছে অবস্থিত। এই কুমারী বসন্ত বর্ষাকালে পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়। তিন্দু বাজার থেকে কুমারী ঝর্ণা নদী পার হতে 10-20 মিনিট সময় লাগে। তিন্দুরের কাছে রাজা পাথর ও বড় পাথর এলাকা। আপনি যদি তিন্দু থেকে বিশ মিনিটের জন্য উজানে যান, আপনি বিশাল পাথর দেখতে পাবেন। বিশাল আকারের পাথরের কারণে এই স্থানটি বড় পাথর নামে পরিচিত। তিন্দুরের এই বিশাল পাথরের রাজ্যের সৌন্দর্য আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। আছে শুধু পাথর আর পাথর। বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ফাঁক দিয়ে নৌকা এগিয়ে যায়। বিশাল পাথুরে এলাকা জুড়ে রেমাক্রি প্রায় এক ঘণ্টার নৌকায় চড়ে। আপনি চাইলে সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

Related Post

রিজুক জলপ্রপাত বান্দরবান

রিজুক জলপ্রপাত বান্দরবান

রিজুক জলপ্রপাত বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৬৬ কিলোমিটার এবং রুমা বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সাঙ্গু নদীর তীরে অবস্থিত। রুমা ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৭ জুলাই, ২০২৪

নীলগিরি, বান্দরবান

নীলগিরি, বান্দরবান

নীলগিরিকে বাংলার দার্জিলিং বলা হয়। দিগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘ যে কাউকে তার রূপ দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। আপনি যদি সম ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৪ জুলাই, ২০২৪

নাফাখুম জলপ্রপাত

নাফাখুম জলপ্রপাত

নাফাখুম জলপ্রপাত বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত হিসেবে পরিচ ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৮ জুলাই, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).