নাফাখুম যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান শহরে আসতে হবে। তারপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদী পার হয়ে রেমাক্রি বাজার, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে নাফাখুম।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এস. আলম, ইউনিক, সেন্ট মার্টিন হুন্দাই রবি এক্সপ্রেস, হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, সেন্ট মার্টিন, ডলফিন ইত্যাদি বাস ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে 800-900 টাকা নন-এসি এবং 1200-1800 টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়া যায় এবং সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণা, মহানগর ইত্যাদি ট্রেন চট্টগ্রাম যায়। শ্রেণীভেদে ভাড়া 405-1398 টাকা।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। পূবালী ও পূর্বাণী নামে দুই বাদা রওনা হলো বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। এই দুটি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। এছাড়া ধামপাড়া বাসস্টপ থেকে বান্দরবান আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে বান্দরবান যেতে পারেন। মাইক্রোবাসের ভাড়া ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা।
বান্দরবান থেকে থানচি বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার দুটি পথ আছে; বাসে বা রিজার্ভ জিপে। বান্দরবানের থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে এক ঘণ্টা পর একটি লোকাল বাস থানচির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি 200 টাকা, সময় লাগবে 4-5 ঘন্টা। রিজার্ভ জীপ/চান্ডারের খরচ পড়বে 5,500-6,000 টাকা এবং সময় লাগবে 3-3.5 ঘন্টা। একটি গাড়ি 12-14 জন সহজেই বহন করতে পারে। থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক ও নীলগিরি যাবে। এই দীর্ঘ পাহাড়ি যাত্রা চারপাশের আদিম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আপনার চোখ ও মনকে সতেজ করবে।
থানচি পৌঁছে আপনাকে অবশ্যই একটি গাইড ঠিক করতে হবে। গাইড ছাড়া নাফাখুম ট্যুরে যাওয়া যায় না। উপজেলা প্রসিকিউশনের অনুমতি থাকলে তাকে গাইড হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। পরের দিন থানচি ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ফি ১৫০০ টাকা। আপনি গাইড ঠিক করতে থানচিতেও যেতে পারেন অথবা আপনার পরিচিত একজন গাইডের সাথে কথা বলে ঠিক করতে পারেন। গাইড ঠিক করার পর আপনাকে থানচি বিজিবি ক্যাম্প/থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। সমস্ত ভ্রমণকারী সদস্যদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কোথায় যাবেন, কতদিন থাকবেন তা কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। এবং আপনার গাইড এই কাজে সাহায্য করবে। আর মনে রাখবেন বিকাল ৩টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই আপনি যদি একই দিনে রেমাক্রি যেতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই দুপুর ২টার মধ্যে থানচিতে পৌঁছাতে হবে। না হলে পরদিন সকালে থানচি থেকে রেমাক্রি যেতে হবে। এটি আপনাকে আরও এক দিন সময় নেবে।
অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করতে হবে। এক নৌকায় ৪-৫ জন যাওয়া যায়। রেমাক্রি পর্যন্ত নৌকা রিজার্ভেশন এবং পরের দিন ফেরার জন্য ভাড়া 4,000-5,000 টাকা। যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগবে। সাঙ্গুতে পানি কম থাকলে নৌকা থেকে নেমে কিছু জায়গায় হেঁটে যেতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। পথে সাঙ্গু নদীর রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে। এ ছাড়া পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস যাবে পথে। আর গাইডের যাতায়াত, বাসস্থান ও অন্যান্য খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে।
সাধারণত ভোরে বান্দরবান থেকে রওনা দিলে রেমাক্রি পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যায়। সেদিন নাফাখুম যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেই রাতে রেমাক্রি বাজারে থেকে পরদিন সকালে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। রেমাক্রি থেকে ৫০০ টাকায় স্থানীয় গাইড ভাড়া করতে হবে। থানচি থেকে গাইড ঠিক করবে। রেমাক্রি থেকে রেমাক্রি খাল হয়ে নাফাখুম যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। তবে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করবে সফরসঙ্গীদের হাঁটার গতি এবং যাত্রার সময়ের ওপর। বর্ষাকালে রেমাক্রি খালে প্রচুর পানি থাকে। কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও বেশি। কিছু কিছু জায়গায় রেমাক্রি খাল পার হতে হয়। পানি বেশি হলে এই পারাপারে আরও সময় লাগবে। চিন্তা করবেন না, আপনার গাইড আপনাকে এই জায়গাগুলিতে সাহায্য করবে। রেমাক্রি খাল ও এর চারপাশের সৌন্দর্য একবার দেখলেই শুনতে পাবেন নাফাখুম জলপ্রপাতের গর্জন।