Pagla Masjid Kishoreganj

পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ

Kishoreganj

Shafayet Al-Anik

·

৫ আগস্ট, ২০২৪

পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ পরিচিতি

পাগলা মসজিদ (পাগলা মসজিদ) কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। পাগলা মসজিদ মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের জন্যই এক বিস্ময়। এই মসজিদটি দান হিসাবে প্রচুর অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত।

পাগলা মসজিদের ইতিহাস

জনশ্রুতি আছে যে একজন উন্মাদ আধ্যাত্মিক সাধক নরসুন্দা নদীর তীরে একটি মাদুরের উপর ভাসতেন এবং মসজিদের স্থানে থাকতেন। ধীরে ধীরে ভক্তরা তাকে ঘিরে জড়ো হতে থাকে। আধ্যাত্মিক সাধকের মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা এখন পাগলা মসজিদ নামে বেশ পরিচিত।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকাদার পাগলা সাহেব, হয়বতনগরের প্রতিষ্ঠাতা, দেওয়ান হয়বত দাত খানের জামাতা, প্রাচীন বাংলার ১২টি ভূঁইয়ার অন্যতম বীর ঈসা খাঁর ৫ম পুত্র, ধ্যান করতেন। এবং এখানে প্রার্থনা করুন। পরে তাঁর নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয় পাগলা মসজিদ।
অন্য স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, হাইওয়াতনগর এলাকার জমিদার দেওয়ান হাইওয়াত দাত খানের তৃতীয় পুরুষ অধস্তন জোলকরণ খানের স্ত্রী আয়েশা দাত খান এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং প্রজারা তাকে 'পাগল বিবি' বলে ডাকত। স্বপ্নময় হয়ে তিনি দেওয়ানবাড়ি থেকে একশ মাইল দূরে নরসুন্দার তীরে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।

মসজিদের গঠন ও স্থাপত্য

আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই পাগলা মসজিদের বর্তমান জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। যদিও শুরুতে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ১০ শতাংশ ওয়াকফ জমি শুধু মসজিদের নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনতলা পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং পাঁচতলা ভবনের আকারের একটি মিনার রয়েছে। মসজিদটিতে প্রায় এক হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতা রয়েছে এবং মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
বর্তমানে লেক সিটি প্রকল্পের অধীনে, পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী খনন করা হচ্ছে, একটি মনোরম সেতু নির্মাণ, মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জা মসজিদটিকে দিন ও রাত উভয়ই দেখার মতো করে তোলে।

এত দান পাবার কারণ

পাগলা মসজিদ সকল ধর্মের মানুষের জন্য একটি সর্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র। মানুষ বিশ্বাস করে যে কেউ যদি আন্তরিক নিয়তে পাগলা মসজিদে কিছু দান করে তাহলে তার মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। এমন বিশ্বাসের কারণে মানুষ পাগলা মসজিদে প্রচুর দান করে থাকে। অনেকে এই মসজিদে মানত করে বিভিন্ন কাজে যেমন হৃদয়ের ইচ্ছা, রোগমুক্তি, উচ্চশিক্ষা, সন্তান লাভ ইত্যাদি।শুধু টাকা নয়, অনেকে স্বর্ণালংকার, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন।
কয়েক মাসের মধ্যেই দানের বুক ভরে যায় টাকায়। সাধারণত 3 থেকে 4 মাস অন্তর কসকেট খোলা হয়। প্রতিবারই দেখা যায় আগের চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট নগদ ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, অনেক স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়।

দানের টাকা দিয়ে কি করা হয়?

পাগলা মসজিদে দানকৃত অর্থের একটি অংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও সেবকদের বেতন এবং মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করা হয়। আশেপাশের অনেক মসজিদ ও এতিমখানার উন্নয়নে দান করা হয়েছে।
এছাড়া দানকৃত অর্থ এতিমখানা ও মাদ্রাসায় ব্যয় করা হয়। কিছু অর্থ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত দরিদ্র স্থানীয় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং অভাবীদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়।
পাগলা মসজিদের আধুনিকায়নে বর্তমানে ১৫০ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের ৬ তলা বিশিষ্ট একটি সুন্দর পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

পাগলা মসজিদ ভ্রমণ

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের গুরদয়াল সরকারি কলেজ ও আধুনিক সদর হাসপাতালের খুব কাছে অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ শহরের যেকোনো স্থান থেকে রিকশা বা ইজিবাইক ভাড়া করে পাগলা মসজিদে যেতে পারেন।
ট্রেনে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ক্ষেত্রে, আপনি যদি ভোরের দিকে রাইড করেন তবে আপনার অনেক সময় থাকবে। ট্রেন ভাড়া 135-368 টাকা ক্লাসের উপর নির্ভর করে এবং প্রায় 4 ঘন্টা সময় নেয়। কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ করে পাগলা মসজিদে যেতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা খরচ হবে।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ বাসে: ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সৈয়দাবাদ), অনন্যা সুপার ইত্যাদি বাস ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচল করে। বাস ভাড়া 270-350 টাকা। মহাখালী থেকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা এবং গোলাপবাগ থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা লাগবে। কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০-৪০ টাকা রিকশায় সরাসরি পাগলা মসজিদে যাওয়া যায়।

কোথায় খাবেন

কিশোরগঞ্জ শহরের গাঙচিল, তাজ, ধানসিঁড়ি, রিভার ভিউ, দোসাই রেস্তোরাঁ, পানসী ইত্যাদিতে আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারেন এবং মিষ্টির পাগল হলে ঘুরে আসতে পারেন একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টি ভান্ডার বা মদন গোপাল।

কোথায় থাকবেন

রাত্রি যাপনের জন্য কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোডে হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, গাঙচিল, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালামসহ বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তা ছাড়া, অনুমতি সাপেক্ষে, আপনি জেলা সদরের সরকারি পোস্ট অফিস বাংলোতে থাকতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতী মন্দির, গঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, ঈশা খাঁ জঙ্গলবাড়ি দুর্গ, বলিখলা, মিঠামিন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।

Related Post

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এর উত্তরে ইটনা ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ ...

শাফায়েত আল-অনিক

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ

বিস্তীর্ণ জলরাশিতে নৌবিহারের আনন্দ পেতে চাইলে চলে যান নিকলী হাওরে। নিকোলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকোলী উপজেলায় অবস্থিত। ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৯ আগস্ট, ২০২৪

শোলাকিয়া ঈদগাহ

শোলাকিয়া ঈদগাহ

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৩ জুলাই, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).