Nijhum Dwip

নিঝুম দ্বীপ

Noakhali

Shafayet Al-Anik

·

১৮ জুলাই, ২০২৪

নিঝুম দ্বীপ পরিচিতি

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের একটি ছোট দ্বীপ। প্রায় 14,050 একর আয়তনের এই দ্বীপে কামলার চর, বল্লার চর, চর ওসমান ও চর মুড়ি নামে চারটি দ্বীপ এবং কয়েকটি চর রয়েছে। শীতকালে নিঝুম দ্বীপে সরালি, জিরা, লেঞ্জা, পিয়াং, রাঙ্গামুড়ি, চাখাচখি, ভুটিহান, রাজহাঁস, কর্দমাক্ত, বাতান, জিরা, গুলিন্দা, গাঙচিল, কাস্তেচরা, পেলিকান প্রভৃতি হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। স্থানীয় পাখির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক ঈগল, বক শঙ্খ। এছাড়া দ্বীপে রয়েছে হরিণ, বন্য শুকর, শিয়াল, বানরসহ বিভিন্ন সাপ।
নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আপনি পাখি বা হরিণ দেখতে খুব ভোরে উঠে স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিতে পারেন। নিঝুম দ্বীপের মতো এত চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যাবে না। আর পাখি দেখতে চাইলে পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দামরের চর ভালো জায়গা। নিঝুম দ্বীপে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়।

নিঝুম দ্বীপ এর দর্শনীয় স্থানসমূহ

বিকেল ও সন্ধ্যার মধ্যে কবিরাজ চরের কাছে চৌধুরী খালের পাশ দিয়ে একটু হাঁটলে হরিণের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করলে নৌকার মাঝি আপনাকে হরিণ দেখাবে। ১০-১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া নিতে খরচ পড়বে 1000 থেকে 1200 টাকা। সন্ধ্যায়, কবিরাজের চারণভূমিতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে হাজার হাজার মহিষের পাল আপনার নজর কাড়বে।
আর কমলা দ্বীপে কমলা খালে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে তাজা ইলিশ কিনতে পারেন। নিঝুম দ্বীপে, স্থানীয় ছেলেরা গাইডের কাজ করে এবং সকালে তাদের সাথে ম্যানগ্রোভ বনে হরিণ দেখতে নিয়ে যায়। নামার বাজার থেকে নামার বাজার সমুদ্র সৈকতে হেঁটে যেতে 10 মিনিট সময় লাগে। নামা বাজার সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার পাশাপাশি আপনি বারবিকিউ করতে পারেন।
দামার চরের দক্ষিণ পাশের নতুন সমুদ্র সৈকতটি ভার্জিন আইল্যান্ড নামে পরিচিত। এই দ্বীপে অনেক অচেনা পাখি দেখা যায়। এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য ট্রলার ভাড়া 3000 থেকে 3500 টাকা। চৌখালীর নিঝুম রিসোর্টের বারান্দা থেকেও মাঝে মাঝে হরিণ দেখা যায়। এছাড়া সময় থাকলে ট্রলার রিজার্ভ করে ভোলার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরিতে একদিন কাটাতে পারেন।

কখন নিঝুম দ্বীপ যাবেন

শীতকাল অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বছরের অন্যান্য সময়ে মেঘনা নদী এবং সাগর বেশ রুক্ষ থাকে তাই সেই সময়ে নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে করে নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী
বাসে করে নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে নামতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুরে। ঢাকা সয়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে একুশে এক্সপ্রেস, মুনলাইন এন্টারপ্রাইজ, হিমাচল এক্সপ্রেস বাসে করে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে পারেন। ধানমন্ডি জিগাতলা কাউন্টার থেকে একুশে পরিবহনের বাস ছাড়ে সোনাপুর, নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রাত ১০টা ২০ মিনিটে। এসব বাসের নন-এসি ও এসি কোচের ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে হবে সিএনজি বা অন্যান্য যানবাহনে, সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাটে আসতে খরচ পড়বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। একটি সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৫ জন বসতে পারবেন। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সী-ট্রাক, ট্রলার ও স্পিড বোট পাওয়া যাবে। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া পর্যন্ত সী-ট্রাক, ট্রলার ও স্পিড বোটের ভাড়া জনপ্রতি 90, 120-150 এবং 400 টাকা। হাতিয়া নলচিরা ঘাটে নেমে একটি মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাটে পৌঁছান, মোটরসাইকেল ভাড়া পড়বে দুইজনের জন্য 400 থেকে 450 টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে দুই জনের ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা।
দ্রষ্টব্য: সি-ট্রাক প্রতিদিন সকাল ৮টায় নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ছাড়ে এবং নলচিরা থেকে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাটে ফিরতি সী-ট্রাক সকাল ১০টায় ছাড়ে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে নোয়াখালী থেকে নিঝুম দ্বীপ
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে নোয়াখালীর মাইজদী ট্রেন থেকে নামতে হবে। উপকুল এক্সপ্রেস নামের একটি আন্তঃনগর ট্রেন মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন বিকেল ৩:১০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, মাইজদীতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। ট্রেনের টিকিটের ভাড়া ক্লাস ভেদে ৩১৫ টাকা।
মাইজদী থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর স্থানীয়ভাবে আসতে হলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে উপরোক্ত উপায়ে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।
ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে নিঝুম দ্বীপ
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় একটি মাত্র লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পরদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে লঞ্চটি হাতিয়ার তমুরদ্দি ঘাটে পৌঁছায়। তমুরদ্দি ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফিরতি লঞ্চ ছেড়ে যায় দুপুর সাড়ে ১২টায়। লঞ্চের ডেক ভাড়া - 350 টাকা, একক কেবিন - 1200 টাকা এবং ডাবল কেবিন - 2200 টাকা।
হাতিয়ার তমুরদ্দি ঘাটে নেমে মোটরবাইকে করে মোক্তারিয়া ঘাটে আসতে হবে। মোক্তারিয়া ঘাটে আসতে দুইজনের ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা। নিঝুমদ্বীপের মোক্তারিয়া ঘাট থেকে বন্দরটিলা ঘাটে যেতে জনপ্রতি ট্রলার ভাড়া পড়বে ২২ টাকা। আর বন্দরটিলা ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে করে বাজারে যেতে দুইজনকে খরচ করতে হয় ১০০ টাকা।
আবার তমুরদ্দি ঘাট থেকে সরাসরি নিঝুমদ্বীপ বাজারে যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ১০টায় তমুরদ্দি ঘাট থেকে কিছু মাছ ধরার ট্রলার সরাসরি নিঝুম দ্বীপ নামর বাজারে যায়, সেগুলো জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ভাড়া নেওয়া যায়। এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজারে যেতে ট্রলারের আকার ভেদে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা লাগতে পারে।
বিশেষ নির্দেশনা: 1. যদি কোনো কারণে টুলটি তমুরুদ্দি এমভিতে চলে যায়। ফারহান ৩/৪ লঞ্চ করে, কিন্তু একই দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এমভি টিপু-৫ বা এমভি পানামা লঞ্চ তজুমদ্দিন বা মনপুরা ঘাটে আবার এমভি। ফারহান ৩/৪টি লঞ্চ ধরতে পারে। আপনি চাইলে মনপুরা ঘাট থেকে ট্রলারে করে সহজেই হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাট যেতে পারেন।
2. এবং যদি এমভি টিপু-5 এবং এমভি পানামা লঞ্চটি মিস করে তবে দ্রুত এমভি ফারহান-6 বা এমভি ফারহান-7 লঞ্চে চড়ে। এসব লঞ্চ ছাড়ার সময় সাড়ে ছয় মিনিট হলেও একটু দেরিতে ছাড়ে। এই লঞ্চে করে তজুমদ্দিন ঘাটে যায় এমভি। ফারহান-১/১ লঞ্চ ধরতে পারবে। তজুমদ্দিন ঘাট থেকে ট্রলারেও হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাট যাওয়া যায়।
এই ৬টি লঞ্চ একই মালিকের। প্রয়োজনে নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। এমভি ফারহান 3 – 01785-630365 , 01785-630366 , 01785-630367 এমভি ফারহান 4 – 01785-630368 , 01785-630369 , 01785-6303
চাতরাঘাম সদরঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ পর্যন্ত লঞ্চ
এমভি বার আউলিয়া, এমভি আব্দুল মতিন ও এমবি মনিরুল হক স্টিমার চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে শুক্র ও রবিবার ছাড়া সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টায় হাতিয়া নলচিরা ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সদরঘাট, চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়ার ভাড়া: চেয়ার ক্লাস - 350 টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণী - 1110 টাকা এবং প্রথম শ্রেণী - 2215 টাকা।
মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে হাতিয়ার নলচিরা থেকে মোক্তারিয়া ঘাটে পৌঁছে উপরে উল্লিখিত পথে নিঝুম দ্বীপে পৌঁছাতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

নামার বাজার সমুদ্র সৈকতের কাছে নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য নিঝুম রিসোর্ট একটি ভালো জায়গা। নিঝুম রিসোর্টে 1500 থেকে 3000 টাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম পাওয়া যায়। সাধারণত অফ সিজনে (এপ্রিল 15 - সেপ্টেম্বর 30) রুম 50% ডিসকাউন্টে পাওয়া যায়।
যোগাযোগ - নিঝুম দ্বীপ অফিস: সবুজ ভাই: 01724-145864, 01845-558899, 01738-230655 ঢাকা অফিস: অবকাশ ট্যুরিজম লিমিটেড, আলহাজ্ব সামসুদ্দিন ম্যানশন (নবম তলা), 17 নিউ ইস্কাটন রোড। ফোন: 9342351, 9359230, 8358485, 01552-372269
নামার বাজারে হোটেল শাহীনের দাম একটু বেশি। তবে প্রয়োজনে ০১৮৬৩-১৫০৮৮১ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। আর নামার বাজারের মসজিদ বোর্ডিং এ যেতে পারেন সবচেয়ে সস্তায়। যদিও এই ব্যবস্থা স্থানীয় মসজিদ দ্বারা করা হয়েছে, এখানে আপনি ঘরের সাথে কোন সংযুক্ত বাথরুম এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা পাবেন না। এখানে 2টি সাধারণ বাথরুম এবং 1টি টিউবওয়েল রয়েছে। এখানে আপনি 200 থেকে 400 টাকায় সিঙ্গেল এবং ডাবল বেডের রুম পাবেন। আপনি 01866-373937 এবং 01727-958879 নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। সৈয়দ চাচার বিখ্যাত হোটেল দ্বীপ ওয়েলথে থাকার জন্য কল করতে পারেন 01720-601026 এবং 01760-008106 নম্বরে।
বন্দরটিলায় অবস্থিত নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট ও হোটেল শেরাটনেও রাত কাটাতে পারেন। নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট ঢাকা বুকিং অফিসের ফোন নম্বর হল 01847-123573 এবং নিঝুম দ্বীপ বুকিং অফিসের নম্বর হল 01847-123572।

কোথায় খাবেন

নিঝুম দ্বীপে ভালো খাবার নেই তবে আপনি সামুদ্রিক মাছ, মোটা ভাত, মাংস, রুটি ইত্যাদি পেতে পারেন। আলতাফ চাচার হোটেলের (হোটেল আসিফ) খাবারের মান অন্যান্য হোটেলের তুলনায় বেশ ভালো। আর আগে থেকে খাবার অর্ডার করলে তুলনামূলক ভালো খাবার পাবেন। এছাড়া নামার বাজারে বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে, যেখানে সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ির পোনা খুব ভালো পাওয়া যায়। বার বিকিউ এর জন্য নিঝুম রিসোর্টের ম্যানেজার সব ব্যবস্থা করবেন। নিঝুম দ্বীপে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় ডাব পাওয়া যাচ্ছে।

ভ্রমণ পরামর্শ:

তথ্যের সাহায্যে: জাহিদ ইবনে জাহান

Related Post

গান্ধী আশ্রম নোয়াখালী

গান্ধী আশ্রম নোয়াখালী

গান্ধী আশ্রম (গান্ধী আশ্রম) নোয়াখালী জেলার মাইজদী কোর্ট থেকে 25 কিলোমিটার দূরে সোনামুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারের কাছে অবস ...

শাফায়েত আল-অনিক

৪ জুলাই, ২০২৪

নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার

নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নোয়াখালী জেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র ...

শাফায়েত আল-অনিক

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বজরা শাহী মসজিদ

বজরা শাহী মসজিদ

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে নির্মিত ঐতিহাসিক মসজিদটির নাম বজরা শাহী মসজিদ। বজরা শাহী মসজিদ দিল্লির ...

শাফায়েত আল-অনিক

৪ আগস্ট, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).