Lawachara National Park

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

Moulvibazar

Shafayet Al-Anik

·

৩ জুলাই, ২০২৪

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিচিতি

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল (আংশিক) উপজেলায় অবস্থিত। লাউয়াছড়া বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ১০টি জাতীয় উদ্যানের একটি। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিমি। এই পার্কটিকে একটি প্রাকৃতিক যাদুঘর বলাটা 1,250 হেক্টর এলাকা নিয়ে একটি ছোটোখাটো কথা হবে৷ নানা ধরনের গাছপালা ও প্রাণী এই বনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান এবং এটি দেশের একটি ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান লাউয়াছড়া উদ্যান।

কি দেখবেন

জীববৈচিত্র্য বনের প্রধান আকর্ষণ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে দেখা যায় নানা প্রজাতির বিড়াল ও পাখি। জাতীয় ডাটাবেস অনুসারে, এই পার্কে 460 প্রজাতির বিরল গাছপালা এবং প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে চাপালিশ, সেগুন, আগর, জারুল, আকাশমণি, লোহাকাঠ, আউয়ালসহ ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে 20 প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, 240 প্রজাতির পাখি, 6 প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে হরিণ, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই গণ্ডগোকুল, বাগদাশ, বন্য মোরগ, সজারু, অজগর, গুইসাপ, হনুমান, কাঁঠাল, মেছোবাগ, চিতাবাঘ, বন্য বিড়াল, কাঠবিড়ালি, বন্য কুকুর। এছাড়াও রয়েছে পাহাড়ি ময়না, ধনেশ, মথুরা, সবুজ ঘুঘুসহ নানা ধরনের পাখি। বিলুপ্তপ্রায় পেঁচার সবচেয়ে বড় আবাসস্থল লাউয়াছড়া পার্ক।
কাছে থেকে বনের সৌন্দর্য দেখার জন্য রয়েছে ৩টি ট্রেইল। আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা এবং তিন ঘন্টা এই ট্রেইলে ট্রেক করে আপনি খুব কাছ থেকে এই বনের রূপ উপভোগ করতে পারেন। ট্রেকিং সহায়তার জন্য গাইড পাওয়া যায়। আপনি চাইলে আপনার সাথে একজন গাইড নিয়ে যেতে পারেন। আলো-আঁধারির ঝলমলে খেলা, পাখির কিচিরমিচির, কীটপতঙ্গের গান, সব মিলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় এক অদ্ভুত জাদুতে আপনাকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া লাউয়াছড়া পার্কের ভেতরে খাসিয়াপুঞ্জি, পানের বরজ, চা বাগান ও ঝিরি রয়েছে।
ঢাকা-সিলেট রেললাইন লাউয়াছড়ার বনের মধ্য দিয়ে গেছে। রেললাইনের দুই পাশে গাছপালা। দর্শনার্থীদের কাছেও এই স্থানটি বেশ জনপ্রিয়। রেললাইন ধরে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন। এছাড়া লাউয়াছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়বে চা বাগান, উঁচু-নিচু পাহাড়, আনারস, লিচু ও লেবুর বাগান। রাস্তার দুপাশে সবুজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, মনে হবে সবুজের স্বর্গ।

কি ভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার জন্য ট্রেন সবচেয়ে ভালো। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেনে আপনি আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত বা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন বেছে নিতে পারেন। ট্রেনের ভাড়া ক্লাস ভেদে জনপ্রতি 240 থেকে 828 টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা।
ঢাকা থেকে বাসে শ্রীমঙ্গল, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি/নন এসি বাস ফকিরাপুল বা সয়দাবাদ থেকে ৫৭০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। বাসে যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে। ক্লাস অনুযায়ী ট্রেনের ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৬৮৫ টাকা।
শ্রীমঙ্গল পৌঁছে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো যানবাহনে করে লাউয়াছড়া উদ্যানে যেতে পারেন। ইজিবাইক/সিএনজি/জিপ/মাইক্রোবাস যে কোন জায়গায় যেতে পারবেন। ভ্রমণের সময় সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি ভাড়া নিবে 400-500 টাকা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছাত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ ফি ২০ টাকা (জনপ্রতি), প্রাপ্তবয়স্ক পর্যটকদের (দেশীয়) ৫০ টাকা। এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রবেশ ফি ৫০০ টাকা। গাড়ি, জীপ এবং মাইক্রোবাস পার্কিংয়ের জন্য আপনাকে 25 টাকা দিতে হবে। আপনি যদি গাইড নিতে চান তবে এখানে 200 থেকে 600 টাকার মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরির গাইড পাওয়া যায়।

এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা

লাউয়াছড়া ঘুরে দেখার জন্য 2-4 ঘন্টা যথেষ্ট হতে পারে। বাকি সময় কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের আশপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে রয়েছে মাধবপুর লেক, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, নীলকন্ঠ চা কেবিন, বাইক্কাবিল এবং সুন্দর চা বাগান। আপনি আপনার সময় এবং আগ্রহ অনুযায়ী পরিকল্পনা কাস্টমাইজ করতে পারেন. আপনি একদিনের সফরের জন্য একটি সিএনজি রিজার্ভ করতে পারেন। চা বাগানের ভিতরে সুন্দরভাবে সাজানো মাধবপুর লেক দেখার জন্য সকাল বা বিকাল সবচেয়ে ভালো সময়। ভোরে মাধবপুর লেকে গেলাম, সেখানে ঘণ্টাখানেক ঘুরে দুপুরের আগে লাউয়াছড়া উদ্যানে চলে আসি। আপনি আপনার পছন্দের ট্রেইলে শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে যেতে পারেন। দুপুরের খাবারের পর বিকেলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে যান, বিকেল ৫টার আগে চেক আউট করুন, তারপর নীলকন্ঠ চায়ের কেবিনে যান, একটি বিখ্যাত সাত রঙের চায়ের দোকান। সন্ধ্যায় চা খেয়ে ফিরে আসুন শ্রীমঙ্গল। সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ 1200-1500 টাকা লাগবে। কিন্তু আগে ঠিক করে নিন কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন, কী দেখবেন।

খাওয়ার ব্যবস্থা

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বা আশেপাশে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই প্রয়োজনে নিজের দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল আবার খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে। আছে সবার প্রিয় পানশী রেস্টুরেন্ট। 100-500 টাকায় ভর্তা ভাজি সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য বেশ কিছু সুন্দর রিসোর্ট আছে। চা বাগানের কাছে অনেক কটেজ এবং সরকারি ও বেসরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন জায়গায় থাকতে পারেন। লাউয়াছড়ার খুব কাছেই গ্র্যান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট নামে একটি পাঁচ তারকা রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগানে ঘেরা রিসোর্টের মধ্যে সুন্দর পরিবেশ উল্লেখযোগ্য-
টি রিসোর্ট ও জাদুঘর: বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্টটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে অবস্থিত, প্রতিটি বাংলো টাইপ কটেজে 4-8 জন লোক থাকতে পারে। প্রতি রাতে 5,000 – 8,000 টাকা। যোগাযোগ: 01749-014306, ওয়েবসাইট।
নভেম ইকো রিসোর্ট: অবস্থান: বিষমণি, রাধানগর, শ্রীমঙ্গল। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ অনেক সুন্দর সুন্দর কটেজ রয়েছে। মাটির ঘর, কাঠের ঘর, পারিবারিক ভিলা, তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। 8,000 - 17,500 টাকা প্রতি রাতে 2-8 জনের জন্য। যোগাযোগ: 01709 882000, ওয়েবসাইট।
নিসর্গ ইকো কটেজ: এই কটেজটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে অবস্থিত, কটেজগুলি একটি গ্রামীণ পরিবেশে নির্মিত এবং 3-5 জন মানুষ থাকতে পারে। যোগাযোগ: 01766-557780, ওয়েবসাইট।
নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ: এই কটেজটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে অবস্থিত, কটেজগুলি গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি এবং 3-8 জন মানুষ থাকতে পারে। যোগাযোগ: 01766-557780, ওয়েবসাইট।
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট: লাউয়াছড়া বাগানের পাশের এই রিসোর্টে ইকোনমি, ডিলাক্স, বিলাসবহুল, স্যুট রুমের ভাড়া ৩,০০০-৮,০০০ টাকা। যোগাযোগ: 01763555000, ওয়েবসাইট।
শান্তি বাড়ী রিসোর্টঃ শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রাস্তা ধরে একটু অভ্যন্তরীণ দিকে গেলে এই রিসোর্টে রয়েছে নানা ধরনের কটেজ। এই নম্বরে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানুন 01716189288, ওয়েবসাইট।
উপরোক্ত রিসোর্ট এবং কটেজের রেট ঋতু এবং উপলক্ষ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছাড় রয়েছে। কোথায় থাকবেন তা ঠিক করার আগে তাদের সাথে কথা বলুন এবং প্রয়োজনে ভাড়ার বিষয়ে একটু দর কষাকষি করুন। এছাড়া কম খরচে শ্রীমঙ্গলে থাকতে চাইলে শহরে অনেক মানের হোটেল আছে, একটু সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের হোটেল।
পার্কে যাওয়ার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবেঃ

Related Post

মাধবপুর লেক

মাধবপুর লেক

মাধবপুর লেক (মাধবপুর লেক) বা হ্রদ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাধ ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৩ জুন, ২০২৪

শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর মৌলভীবাজার

শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর মৌলভীবাজার

শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম (শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম) চা বাগানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখ ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৮ জুন, ২০২৪

পাথারিয়া পাহাড় মৌলভীবাজার

পাথারিয়া পাহাড় মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া পাহাড় স্থানীয়দের কাছে আদম আইল নামে পরিচিত। ভারতের পূর্ব সীমান্তে খ ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৯ জুন, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).