Itna Haor Kishoreganj

ইটনা হাওর কিশোরগঞ্জ

Kishoreganj

Shafayet Al-Anik

·

৬ আগস্ট, ২০২৪

ইটনা হাওর কিশোরগঞ্জ পরিচিতি

কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যতম হাওর উপজেলা ইটনা। ইটনা হাওরে সারা বছরই কমবেশি পানি থাকলেও বর্ষাকালে হাওরগুলো শৈল্পিক রূপ ধারণ করে। তারপর উভয় চোখ দিয়ে কেবল দিগন্তকে সমুদ্র বা জলের বিস্তৃতি হিসাবে দেখা যায়। আবার দু-একটা সবুজ গাছ মাথা থেকে ফুটেছে, দু-একটা বাড়ি দ্বীপের মতো ভেসে উঠেছে। বর্ষাকালে ইটনা হাওর অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তাই ইটনা ভ্রমণে অনেক নৌকা দেখা যাবে।
হাওরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে। একটি নৌকা ভাড়া করে আপনি ইটনা হাওর ঘুরে দেখতে পারেন এবং অপূর্ব প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। সেই সাথে হাওরের পানিতে সাঁতার কাটতে এবং জলক্রীড়া উপভোগ করতে পারেন। আর হাওরের বুকে সুন্দর সূর্যাস্ত দেখার মুগ্ধতা ভুলবেন কী করে! ইটনায় অবস্থিত দুটি উল্লেখযোগ্য হাওর হল শনির হাওর ও ধনপুর হাওর।
ইটনা হাউ ভ্রমণ ছাড়াও ইটনা সদরে অবস্থিত 'ইটনা শাহী মসজিদ' উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এ ছাড়া জয়সিদ্ধি গ্রামে দেওয়ানের বাড়ি, মহেশগুপ্তের জমিদার বাড়ি (গুপ্ত বাড়ি), গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি এবং আনন্দ মোহন বসুর বাড়ি রয়েছে।
হাওরের মাঝ দিয়ে পানির সমান রাস্তা: দুপাশে পানি আর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পাকা রাস্তা। অনেকেই হয়তো এমন দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও দেখেছেন। ইটনারও এরকম বেশ কয়েকটি রাস্তা রয়েছে। তবে কম বর্ষায় রাস্তাঘাট পানিতে ভরে গেলে পানির নিচে তলিয়ে যায় সড়কগুলো। আপনি যদি এমন রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে বর্ষার শুরুতে যেতে হবে যখন পানি কম থাকে অথবা পানি কমে গেলে যেতে হবে।

ইটনা হাওরে কিভাবে যাবেন

ইটনা হাওয়ারে সরাসরি যেতে হলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে করে কিশোরগঞ্জ আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ: কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৭:১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর যাওয়ার ট্রেন ধরলে রাত ১১টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছানো যায়। ট্রেনের টিকিট কিনতে ক্লাস ভেদে 135 টাকা থেকে 368 টাকা লাগবে। তারপর আপনাকে ইজিবাইকে (অটো) শহরের একরামপুর মোড়ে আসতে হবে মাত্র ৫ টাকা ভাড়ায় বা পায়ে হেঁটে ৫ মিনিট।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের বাসে : মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা পরিবহন অথবা গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা সুপার অথবা কমিউটার বাসে কিশোরগঞ্জ শহর গাইতল বাসস্ট্যান্ড। বাস ভাড়া জনপ্রতি 270-350 টাকা। মহাখালী থেকে প্রায় 3 ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে প্রায় 4 ঘন্টা লাগবে। আর গোলাপবাগ থেকে হাওর বিলাস বা উজান ভাটির বাসে আসলে সরাসরি চামতা বন্দর/চামতা ঘাটে নেমে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে অন্য পরিবহনে চামতা বন্দরে আসতে হবে না। তবে কিশোরগঞ্জে কোনো বাস সার্ভিস খুব একটা ভালো নয়। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভালো সার্ভিস হচ্ছে মহাখালীর অনন্যা পরিবহন এবং গোলাপবাগ থেকে বাস সার্ভিস।
আপনি যদি অনন্যা সুপার বা কমিউটার বাসে কিশোরগঞ্জের গাইতাল বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান, তাহলে সেখান থেকে ইজিবাইক নিয়ে শহরের একরামপুর জংশনে যান। ইজিবাইক 15 টাকা আর রিকশা 30 টাকা।
কিশোরগঞ্জ থেকে ইটনা : একরামপুর জংশন থেকে চামতা ঘাটে যেতে হলে 40 টাকা থেকে 50 টাকা ভাড়ায় সিএনজি বা মাহেন্দ্র ট্রেনে যেতে হবে। একরামপুর থেকে চামতা ঘাটের দূরত্ব বিশ কিলোমিটার। চামঘাট থেকে ইটনা পর্যন্ত ট্রলার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ট্রলারগুলো নিয়মিত বিরতিতে ইটনার উদ্দেশ্যে চামতা ঘাট ছেড়ে যায়। একইভাবে ইটনা থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ট্রলার চলাচল করে। ট্রলারে করে ইটনা যেতে ৬০ টাকা লাগে, আর সময় লাগে দুই ঘণ্টা। বলে রাখা ভালো যে, কিশোরগঞ্জের স্থানীয় লোকজন চামতা ঘাটকে আঞ্চলিকভাবে 'চামটা ঘাট' বলে ডাকে।
চামঘাট থেকে সারাদিনের জন্য ইঞ্জিন বোট বা ট্রলার রিজার্ভ করে রাখলে একদিনে সব জায়গায় ঘুরে একই দিনে কিশোরগঞ্জ শহরে ফিরতে পারবেন। এক্ষেত্রে ট্রলারের আকার ভেদে ভাড়া পড়বে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

ইটনা কোথায় থাকবেন

ইটনা পর্যটকদের জন্য ভালো বাসস্থান গড়ে তোলেনি। কিছু স্ট্যান্ডার্ড রেস্ট হাউস আছে। ইটনা জেটির ডান পাশে ঠাকুর গেস্ট হাউসে আপনি 150 থেকে 300 টাকায় একটি রুম পেতে পারেন। তবে আপনি চাইলে উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া ভালো মানের হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলায় ফিরে আসতে হবে। কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে গাঙচিল, ক্যাসেল সালাম, রিভারভিউ, উজান ভাটি উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

ইটনা বাজারে খাবারের জন্য বেশ কিছু হোটেল পাবেন। হাওরের বিভিন্ন ধরনের তাজা মাছ দিয়ে খুব ভালোভাবে পেট ভরাতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি যদি মিষ্টি প্রেমী হন তবে কিশোরগঞ্জের মদনগোপাল বা রাজমণি সুইটসে মালাইকারি, একরামপুর ব্রিজের কাছে লক্ষীভান্ডারে রসমালাই চেষ্টা করুন।
ফিচার ইমেজঃ আসিফ রহমান

Related Post

পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ

পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ

পাগলা মসজিদ (পাগলা মসজিদ) কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। পাগলা মসজিদ মুসলিম ও অমুসলিম ...

শাফায়েত আল-অনিক

৫ আগস্ট, ২০২৪

কুড়িখাই মেলা কটিয়াদী

কুড়িখাই মেলা কটিয়াদী

এক সময় সারা বছরই গঞ্জের গ্রামে গ্রামে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা বসত। সময়ের সাথে সাথে আমাদের মন-মানসিকতা বদলে ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৩ জুলাই, ২০২৪

শোলাকিয়া ঈদগাহ

শোলাকিয়া ঈদগাহ

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৩ জুলাই, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).