গাজী কালু চম্পাবতী মাজার শরীফ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বারোবাজারে অবস্থিত। বারোবাজারে ইসলাম প্রচারে আসা আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে গাজী, কালু ও চম্পাবতী ছিলেন। গাজী, কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তি প্রচলিত আছে।
জনশ্রুতি আছে যে বরখান গাজী ছিলেন বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ সিকান্দারের পুত্র এবং কালু ছিলেন সিকান্দারের পালক পুত্র। বরখান গাজী সিলেট থেকে গাজী পর্যন্ত সুন্দরবন পাড়ি দিয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ইসলামে দীক্ষিত করেন। চাঁপাইনগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে কুতুত রাজার কন্যা চম্পাবতীর সাথে গাজীর প্রেমের সম্পর্কে তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুকুট রাজা তার সেনাপতি দক্ষিণ রায়কে গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দেন। সেনাপতি দক্ষিণা রায় যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। রাজা রামচন্দ্র গাজীর অনুসারীদের কাছে পরাজিত হন এবং চম্পাবতীকে ঝিনাইদহে তার প্রধান বাড়ি বেড়িবাথানে নিয়ে যান।
পরে গাজীর অনুসারীদের সাথে রাজা রামচন্দ্রের বহু যুদ্ধের পর গাজী চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজারে ফিরে আসেন এবং তারা বারোবাজারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রী রাম রাজার বেড়াযুক্ত হ্রদের দক্ষিণ তীরে আট ফুট উঁচু তিনটি মন্দিরের মধ্যে মাঝখানেরটি গাজীর, পশ্চিমেরটি কালুরের এবং পূর্বেরটি চম্পাবতীর নামে পরিচিত। এ ছাড়া গাজী কালু চম্পাবতী মাজারের কাছেই জেনারেল দক্ষিণা রায়ের মাজার রয়েছে।
গাজী, কালু ও চম্পাবতীকে নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র, পালা গান, মঞ্চ নাটক রচিত হয়েছে। মাজারের চারপাশে ছোট ছোট 6টি বটগাছ রয়েছে। অনেকেই তাদের মানত পূরণের জন্য প্রাচীনতম বড় বটগাছে বিভিন্ন রঙের পলিথিনের সুতোর মতো বেঁধে রাখেন। প্রেমিকরা কাগজের ছোট টুকরোতে তাদের শুভেচ্ছা লিখে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। 1992 সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই তিনটি কবর একসঙ্গে বেঁধে চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করা হয় এবং চাকরদের জন্য টিনের চালা তৈরি করা হয়। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ গাজী কালু চম্পাবতী মন্দিরে মানত করতে আসেন।