Ahsan Manzil

আহসান মঞ্জিল

Dhaka

Shafayet Al-Anik

·

২৬ আগস্ট, ২০২৪

আহসান মঞ্জিল পরিচিতি

আহসান মঞ্জিল (আহসান মঞ্জিল) পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস জড়িত। ঢাকার পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে আহসান মঞ্জিলকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নবাব পরিবারের অনেক স্মৃতিচিহ্ন সম্বলিত এই প্রাসাদটি বর্তমানে একটি জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস

আহসান মঞ্জিল বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও নবাবী ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে টিকে থাকা একটি সমৃদ্ধ বিদ্যালয়। আঠারো শতকের মাঝামাঝি জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান বর্তমান মঞ্জিলের স্থানে রংমহল নামে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। পরে তার ছেলে শেখ মতিউল্লাহ প্রাসাদটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। নবাব আবদুল গণির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ ১৮৩০ সালে এটি কিনে নেন। ১৮৫৯ সালে নবাব আবদুল গণি সেখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন। প্রাসাদটি তৈরি করতে দীর্ঘ 13 বছর সময় লেগেছিল। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন 'আহসান মঞ্জিল'।
একসময় ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ গম্বুজ ছিল আহসান মঞ্জিল প্রাসাদের ছাদে সুন্দর গম্বুজ। দোতলা এই ভবনের বারান্দা ও মেঝে মার্বেল পাথরে তৈরি। প্রাসাদের অভ্যন্তরে ডাইনিং রুম, লাইব্রেরি, জলাশয়, দরবার হল এবং বিলিয়ার্ড রয়েছে। আর প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় অতিথি কক্ষ, বৈঠকখানা, নৃত্যকক্ষ, লাইব্রেরি ও অন্যান্য বসার কক্ষ রয়েছে। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে একটি একতলা উঁচু গাড়ির বারান্দা রয়েছে। একটি খোলা সিঁড়ি দক্ষিণ দিকে দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে সামনের বাগানে নিয়ে যায়। প্রসাদের ঠিক সামনেই সুন্দর ফুলের বাগান আর সবুজ মাঠ।
আহসান মঞ্জিলকে ঢাকা শহরের প্রথম ইট ও পাথরের স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর তৎকালীন নবাবদের হাতেই এই ভবনে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে। আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সমানভাবে আকৃষ্ট করে, লর্ড কার্জন আসলে ঢাকার এই ভবনে থাকতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই প্রাসাদটি 19 শতকের মাঝামাঝি থেকে প্রায় 100 বছর ধরে বাংলার একটি প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নবাব পরিবারের বংশধরেরা আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে একটি জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। অনেক সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, পরিমার্জন করার পর আহসান মঞ্জিল যাদুঘর 1992 সালে দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহ। আহসান মঞ্জিলের ২৩টি কক্ষে মোট ৪ হাজার ৭৭টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। নয়টি কক্ষ নবাবি আমলের মতো সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ঘর আপনাকে নিয়ে যাবে নবাবী আমলের ইতিহাসে।
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, নবাবদের পরিচিতি ও বংশতালিকা জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছে। বড় আয়না, বড় লোহার চেস্ট, কাঠের আলমারি, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাঁচ ও চীনামাটির বাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, নবাবদের ব্যবহৃত ঢাল ও তলোয়ার। নবাব আমলের অলংকৃত রূপালী, স্ফটিক চেয়ার-টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্তানি কক্ষ, রাজকীয় অতিথির শোবার ঘর এবং নাচের হল। এছাড়াও রয়েছে সমসাময়িক বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি এবং নবাবদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল টিকেট মূল্য

আহসান মঞ্জিল পরিদর্শনের জন্য সাধারণ দর্শনার্থীদের জনপ্রতি ২০ টাকার প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। 12 বছরের কম বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরা জনপ্রতি 10 টাকায় প্রবেশ করতে পারবে। সার্ক দেশের নাগরিকদের জন্য 300 এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য 500। প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীদের জন্য আহসান মঞ্জিলে কোনো টিকিটের প্রয়োজন নেই। এবং শিক্ষার্থীরা আগে থেকে আবেদন করলে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরটি বিনামূল্যে দেখতে পারবেন।
www.ahsanmanzilticket.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আহসান মঞ্জিল প্রবেশের টিকিট পান

আহসান মঞ্জিল সময়সূচী

আহসান মঞ্জিল শনিবার থেকে বুধবার এই পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। প্রতি শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন করা যায়। আহসান মঞ্জিল জাদুঘর প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে যে কোন বাসে চড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নামুন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন অথবা রিকশা ভাড়া ৩০ টাকা। অথবা ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে রিকশা বা সিএনজি করে গুলিস্তান এসে সদরঘাট হয়ে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন। অথবা গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার জংশন হয়ে বাবুবাজার ব্রিজের আগে রিক্সায় করে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন। এছাড়া ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সিএনজিতে করে সরাসরি আহসান মঞ্জিল আসা যায়।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন ছাড়াও, আপনি কাছাকাছি পুরান ঢাকার আরও কিছু বিখ্যাত স্থান দেখতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লালবাগ কেল্লা, তারা মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, হোসেনী দালান, বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক) এবং সদরঘাট লঞ্চঘাট। আর খাবারের জন্য রয়েছে পুরান ঢাকার বিখ্যাত খাবার হোটেল।

Related Post

বোরো কাটরা ঢাকা

বোরো কাটরা ঢাকা

পুরান ঢাকার চকবাজারে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন বড় কাটরা। প্রধান স্থপতি মীর আবুল কাসেম 1641 খ্রিস ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৩ আগস্ট, ২০২৪

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকা

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকা

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ মুঘল শাসনামলে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মসজিদের ...

শাফায়েত আল-অনিক

১২ জুন, ২০২৪

হাতিরঝিল

হাতিরঝিল

হাতিরঝিল (হাতিরঝিল) রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা, যা নগরবাসীর বিনোদনের জন্য একটি মনোরম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন ...

শাফায়েত আল-অনিক

১০ আগস্ট, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).