Kutubdia Island

কুতুবদিয়া দ্বীপ

Cox's Bazar

Shafayet Al-Anik

·

৯ আগস্ট, ২০২৪

কুতুবদিয়া দ্বীপ পরিচিতি

কুতুবদিয়া কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা। বৈচিত্র্যময় এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম বায়ু খামার, সমুদ্র সৈকত, লবণের খামার, বাতিঘর এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার রয়েছে।

ইতিহাস

ধারণা করা হয়, চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে সাগরে কুতুবদিয়া দ্বীপের উদ্ভব হয়েছিল। আর এই দ্বীপে মানুষ হাঁটা শুরু করে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে। 'কুতুবুদ্দিন' নামে এক তপস্বী ব্যক্তি এই দ্বীপে একটি আস্তানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে আরাকান থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা এ দ্বীপে আসতে শুরু করলে কুতুবুদ্দিন তাদের আশ্রয় দেন। সম্মানের নিদর্শন হিসেবে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় 'কুতুবউদ্দিনের দিয়া' যা পরবর্তীতে 'কুতুবদিয়া' নামে পরিচিত হয়।

কুতুবদিয়া দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

কুতুবদিয়া চ্যানেল: মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে যাওয়ার সময় এই চ্যানেলটি পার হতে হয়। শীতকাল ব্যতীত বছরের অন্যান্য সময় খুব গরম থাকে।
কুতুব আউলিয়া দরবার: কুতুব আউলিয়া দরবার শরীফ দেখতে আপনাকে দ্বীপের ধুরং এলাকায় যেতে হবে। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতবি 1911 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি 11 ফেব্রুয়ারী, 2000 তারিখে মারা যান। প্রতি বছর 7 ফাল্গুন শাহ আব্দুল মালেক আল কুতবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
বাতিঘর: সমুদ্রগামী জাহাজকে পথ দেখানোর জন্য বহু বছর আগে কুতুবদিয়ায় একটি বাতিঘর তৈরি করা হয়েছিল, যার ধ্বংসাবশেষ ভাটার সময় দেখা যায়। সৈকত ধরে উত্তর দিকে গেলে দেখতে পাবেন নবনির্মিত বাতিঘর।
সমুদ্র সৈকত: কুতুবদিয়ায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে। নির্জন এই সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা খুবই কম, তবে এখানে জেলেদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্র সৈকতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে প্রচুর সংখ্যক সিগাল বিচরণ করে। কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত সূর্যাস্ত দেখার আদর্শ জায়গা।
বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে বাংলাদেশের বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে প্রায় 1000 কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
লবণ চাষ: কুতুবদিয়ায় শীতকালে লবণ চাষ করা হয়। প্রাকৃতিক লবণ উৎপাদন দেখতে চাইলে কুতুবদিয়ায় আসতে পারেন।

কুতুবদিয়া দ্বীপ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপ ঢাকা থেকে কুতুবদিয়া যেতে হলে প্রথমে আপনাকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে তারপর মগনামা ঘাট হয়ে কুতুবদিয়া যেতে হবে। সোহাগ পরিবহন, টিআর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্ট মার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, এস আলম, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি। এসি/নন-এসি বাস প্রতিদিন কক্সবাজারে চলাচল করে। বাসের ভাড়া পড়বে 900 থেকে 2500 টাকা। এই বাসগুলো নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়ুন।
চট্টগ্রাম থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপ চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড বা নিউ ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড থেকে চকরিয়া/কক্সবাজার যে কোনো বাসে চকরিয়া যাওয়া যায়। তবে জেবি এক্সপ্রেস, এস আলম বা সৌদিয়া সরাসরি বাসে যাওয়া ভালো। ১৫০-১৮০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে চকরিয়া যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল সিএনজিতে করে মগনামা ঘাটে যেতে হবে জনপ্রতি ভাড়া ৬০-৮০ টাকা (রিজার্ভ 280-320 টাকা)। এটি প্রায় 40-50 মিনিট সময় নেবে। এছাড়া চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে সিএনজি নিয়ে জনপ্রতি ১৮০ টাকা ভাড়ায় ২-৩ ঘণ্টায় মগনামা ঘাটে যাওয়া যায়। সকাল ৭টায় চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গা বাজার থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকায় ইঞ্জিনের কাঠের নৌকায় সরাসরি কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ ঘাটে যাওয়া যায়।
কক্সবাজার থেকে কুতুবদিয়া কক্সবাজার চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মগনামা ঘাট অথবা কক্সবাজার থেকে মহেশখালীতে নৌকায় এবং মহেশখালী থেকে সড়কপথে মগনামা ঘাটে যাওয়া যায়।
চকরিয়া, কুতুবদিয়া চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল সিএনজি নিয়ে জনপ্রতি ভাড়া ৬০-৮০ টাকা (রিজার্ভ 280-320 টাকা) এবং মগনামা ঘাটে যান। এটি প্রায় 40-50 মিনিট সময় নেবে। মগনামা ঘাট থেকে 15-20 টাকায় ইঞ্জিন বোটে অথবা 7-8 মিনিটে 60-80 টাকায় স্পিড বোটে 20 মিনিটে কুতুবদিয়া দ্বীপে পৌঁছানো যায়। মগনামা ঘাট থেকে স্পিড বোটে করে বড়ঘোপ ঘাট বা দরবার ঘাট যাওয়া যায়। কুতুবদিয়া দ্বীপ ঘাট থেকে বড়ঘোপ বাজারে যেতে 20 থেকে 30 টাকা রিকশা ভাড়া লাগবে।

একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা ও খরচ

খুব ভোরে চট্টগ্রাম ত্যাগ করলে বাতাসের বিদ্যুৎ ও লাইট হাউস দেখে দিনের বেলায় ফিরতে পারবেন। আসতে এবং যেতে 6-7 ঘন্টা সময় লাগবে, বাকি সময় আপনি ঘুরে দেখতে পারেন। বড়ঘোপ বাজার থেকে ৩০-৪০ টাকা রিকশা ভাড়া বা ৫-১০ টাকা টেম্পু ভাড়ায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেতে পারেন। বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখার পর রিকশায় করে হাসপাতালের গেটে যাওয়া যায়, হাসপাতালের গেট থেকে সিএনজি বা রিকশা বা জীপে করে কোর্ট গেটে যাওয়া যায়। সেখান থেকে কুতুবদিয়া বাতিঘর দেখা যায়। সব কিছু দেখে শেষ স্পীড বোটটি রওনা হওয়ার আগে বেসে ফিরে যেতে হবে।

কোথায় থাকবেন

কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ বাজারে পর্যটকদের আবাসনের জন্য ‘হোটেল সমুদ্র বিলাস’ নামে একটি আবাসিক হোটেল চালু রয়েছে। সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় এই হোটেলে বসে সমুদ্র দেখতে পারবেন। এখানে 800 থেকে 1200 টাকায় বিভিন্ন ধরনের নন-এসি রুম পাওয়া যায়। যোগাযোগ করতে 01819647355 এবং 01722086847 মোবাইল নম্বরে কল করতে পারেন।
এছাড়া কুতুবদিয়া দ্বীপ ক্যাম্পিং এর জন্য আদর্শ। শান্ত সমুদ্র সৈকতের কাছে ক্যাম্পিং করার জন্য অনেকেই এই দ্বীপটিকে বেছে নেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরও প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলুন।

কোথায় খাবেন

খুব ভালো রেস্তোরাঁ না থাকলেও কুতুবদিয়া দ্বীপ বাজারের স্থানীয় হোটেলগুলোতে ছুটকি, ভর্তা, বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংস খেয়ে পেট ভরে নিতে পারেন। বড়ঘোপ বাজারের নতুন মদিনা বা ক্যাফে আলম তুলনামূলকভাবে ভালো খাবার দেয়।

ভ্রমণ টিপস

কুতুবদিয়া দ্বীপে কোনো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই, এখানে জেনারেটর ও সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যায়। সমুদ্রের জোয়ার নির্ধারণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। তাই সাগরে যেতে হলে নিজ উদ্যোগে ভাটার সময় জানতে হবে। ভাটার সময় সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্পীড বোট এবং ইঞ্জিন বোটে করে দ্বীপ ছাড়ার শেষ সময় আগে থেকেই জেনে নিন। স্পীড বোট এবং ইঞ্জিন বোট সাধারণত সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে।

Related Post

সেন্ট মার্টিন

সেন্ট মার্টিন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ কক্ ...

শাফায়েত আল-অনিক

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লামার পাড়া বৌদ্ধ মন্দির কক্সবাজার

লামার পাড়া বৌদ্ধ মন্দির কক্সবাজার

লামাপাড়া খিয়াং কক্সবাজার জেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের রামু চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বকখালী নদীর তীরে অব ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৮ জুলাই, ২০২৪

রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং স্পা

রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং স্পা

পাঁচ তারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা (সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা) বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, ইনান ...

শাফায়েত আল-অনিক

৪ জুলাই, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).