কুয়াকাটা শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, এখানে দেখার মতো আরও অনেক জায়গা আছে। পূর্ব ও পশ্চিম ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর, গঙ্গামতির বন, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ ও সবুজ বনও সুন্দরবনের একাংশ দেখার সুযোগ পাবেন। অথবা ঐতিহাসিক কুয়া, বৌদ্ধ মন্দির বা দূরবর্তী চর বিজয় অভিযানের জন্য কুয়াকাটা ঘুরে আসতে পারেন।
শুঁটকি গ্রাম: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে মাছ ধরার গ্রামটি অবস্থিত। এখানে শুষ্ক মৌসুম প্রধানত নভেম্বর থেকে মার্চ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। আপনি চাইলে জেলেদের ব্যস্ততা দেখে সময় কাটাতে পারেন। আর আপনি কম দামে বিভিন্ন ধরনের পছন্দের ড্রায়ার কিনতে পারেন।
কাঁকড়া দ্বীপ: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ধরে অনেক পূর্ব দিকে গেলে কাঁকড়ার দ্বীপ বা কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত একটি স্থান দেখা যায়। এখানকার নির্জন সৈকতে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া ঘুরে বেড়ায়। পর্যটন মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত কুয়াকাত সমুদ্র সৈকত থেকে ক্র্যাব আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য স্পিড বোট পাওয়া যায়।
গঙ্গামতি জঙ্গল: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পূর্ব দিকে গঙ্গামতি খাল পর্যন্ত শেষ হয়েছে। আর এখান থেকেই শুরু হয় গঙ্গামতি বন। এ বনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাখি, বনের মুরগি, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখা যায়। অনেকের কাছে এই বন গজমতি জঙ্গল নামে পরিচিত।
ফাতরা বন: সৈকতের পশ্চিম পাশে নদীর অপর পাশ থেকে ফাতরা বন শুরু হয়। এই বনে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বন মোরগ, বানর, বন্য শুকর এবং বিভিন্ন পাখি এখানে পাওয়া যায়। কুয়াকাটা থেকে ফাতরা ফরেস্টে যেতে হলে ইঞ্জিন বোট ভাড়া করতে হবে।
কুয়াকাটার কুয়া: কুয়াকাটা নামের পেছনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে কুয়া। এই কুয়া দেখতে হলে যেতে হবে রাখাইনদের বাড়ি কেরানীপাড়ায়। এলাকায় প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন প্রাচীন কূপ।
কথিত আছে, ১৭৮৪ সালে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর রাখাইনরা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। লবণাক্ত সমুদ্রের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় তারা এখানে মিঠা পানির জন্য কূপ খনন করে এবং স্থানটি ধীরে ধীরে কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।
সীমা বৌদ্ধ মন্দির: সীমা বৌদ্ধ মন্দিরটি কুয়াকাটার প্রাচীন কূপের ঠিক সামনে অবস্থিত। কয়েক বছর আগে এই কাঠের মন্দির ভেঙে ভবন তৈরি করা হয়। এই মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রায় 37 মান ওজনের অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
কেরানীপাড়া: সীমা বৌদ্ধ মন্দির রাস্তা ধরে একটু এগোলে রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানীপাড়া। রাখাইন নারীরা কাপড় বুনতে খুবই দক্ষ এবং তারা যে শীতের পোশাক তৈরি করে তা খুবই আকর্ষণীয়।
মিসরিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাখাইন আরেকটি গ্রাম মিসরিপাড়ায় একটি বড় বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। গুজব রয়েছে যে এই মন্দিরের ভিতরে উপমহাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।