Amiakum Waterfall Bandarban

অমিয়াকুম জলপ্রপাত বান্দরবান

Bandarban

Shafayet Al-Anik

·

৩০ জুলাই, ২০২৪

অমিয়াকুম জলপ্রপাত বান্দরবান পরিচিতি

অমিয়াকুম জলপ্রপাত বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত একটি অসাধারণ জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্যন্ত স্থান। ঠাণ্ডা পানির স্রোত প্রবল বেগে নেমে আসছে সবুজ পাহাড় আর পাথরের বাধা জুড়ে দুধের সাদা ফেনা ছড়িয়ে। লোকালয় থেকে অনেক দূরে, আদিম প্রকৃতিতে গড়িয়ে পড়া জল এবং প্রবাহিত শব্দ তরঙ্গের সুরেলা শব্দ পর্যটকদের বিমোহিত করে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আমিয়াখুম জলপ্রপাত বাংলার স্বর্গের খ্যাতি পেয়েছে। ঝর্ণার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ একে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত বলেছেন।

কখন যাবেন

বান্দরবানের প্রাকৃতিক সম্পদ আমিয়াখুমের সৌন্দর্য দেখতে প্রায় সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের ঢল নামে। বর্ষায় আমিয়াখুমের সৌন্দর্য পূর্ণতা ফিরে পায়। অনেক কষ্টকে মেনে নিয়ে পাহাড়ের দুর্গম অমিয়াখুমের মুখোমুখি হওয়াই প্রকৃত ত্যাগ! তবে পূর্ণ বর্ষা মৌসুমে সাঙ্গু নদীর পানি বেশি থাকে এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি থাকে বলে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। এছাড়া বছরের যে কোন সময় এই ঝর্ণা পরিদর্শন করা যায়। শীতকালে যাওয়া কিছুটা সুবিধাজনক কারণ আপনাকে ট্রেকিং করতে হবে।

আমিয়াখুম যাওয়ার উপায়

অমিয়াখুম যেতে চাইলে দেশের যে কোন স্থান থেকে প্রথমে বান্দরবান জেলায় চলে আসুন। তারপর থানচি উপজেলা হয়ে আমিয়াখুম যেতে হবে। থানচি থেকে দুটি রুটে অমিয়াখুম যাওয়া যায়।
রুট 1: থানচি > পদ্মজিরি > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম। রুট 2: থানচি > রেমাক্রি > নাফাখুম > জিনাপাড়া > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম।
প্রথম রুটে প্রায় 6-7 ঘন্টা ট্রেকিং করতে হয় শুধুমাত্র পদ্মা ঝিরি পর্যন্ত এবং মাঝে মাঝে রাতের ট্রেকিং এরও প্রয়োজন হতে পারে। অনেকেই প্রথম রুট দিয়ে গেলেও দ্বিতীয় রুটটি তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক। এছাড়া পদ্মাঝিরি হয়ে রেমাক্রি হয়ে আসা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে বাস বা জিপে থানচি উপজেলায় যেতে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। থানচি উপজেলায় পৌঁছে আপনাকে অবশ্যই একটি গাইডের ব্যবস্থা করতে হবে। গাইড ছাড়া আমিয়াখুম যাওয়ার অনুমতি নেই। সেখানে প্রশাসনের কাছ থেকে গাইডসহ অনুমতি নিতে হবে। তারপর থানচি থেকে নৌকা রিজার্ভ করে রোমাক্রি বাজার। দুপুরের মধ্যে রোমাক্রি পৌছাতে পারলে সময় নষ্ট না করে নাফাখুম ঝর্ণার দিকে হাঁটা শুরু করতে পারেন। রোমাক্রি থেকে প্রায় আড়াই থেকে আড়াই ঘণ্টার ট্রেকিং করলেই দেখতে পাবেন নাফাখুম ঝর্না। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে থুইসার দিকে রওনা হন। থুইসা পাড়ায় পৌছাতে অনেক রাত হবে মনে করলে আগের মত জিনা পাড়ায় রাত কাটাতে পারেন।
থুইসা পাড়া নাফাখুম ঝর্ণা থেকে 3-4 ঘন্টা ট্রাকিং দূরত্বে অবস্থিত। সেখানে রাত কাটান এবং থানচি গাইড এবং অন্য একজন স্থানীয় গাইডের সাথে আমিয়াখুম যাত্রার জন্য খুব সকালে রওনা হন। বান্দরবানের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এবং দেবতা পাহাড় হয়ে আমিয়াখুম ঝর্ণায় পৌঁছাতে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। ভেলাখুম এবং সাতভাইখুম অমিয়খুম ঝর্ণার কাছে অবস্থিত। তাই সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। আগে থেকেই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করুন। আমিয়াখুম থেকে ফেরার পথে থুইসা পাড়ায় রাত্রি যাপন করে আগের মতই বা ভিন্ন পথে থানচি ফেরা। থানচি থেকে বান্দরবানে পৌঁছে আপনার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যান।

কোথায় থাকবেন

থানচির পর যেখানেই থাকতে চান স্থানীয় আদিবাসী বাড়িতে থাকতে হবে। এই পথ ধরে আপনার বেশ কিছু উপজাতীয় পাড়া রয়েছে। সাধারণত রেমাক্রি, নাফাখুম পাড়া, জিনাপাড়া ও থুইসা পাড়ায় রাত্রিযাপন করা হয়। আপনার গাইড আপনার থাকার সমস্ত ব্যবস্থা করবে।

কোথায় খাবেন

আপনার ট্রেকিং রুটে খেতে হলে আপনাকে স্থানীয় আদিবাসীদের বাড়িতে খেতে হবে। পর্যটকদের সুবিধার্থে রয়েছে বিভিন্ন খাবারের প্যাকেজ। কোথায় এবং কি খাবেন তার জন্য আগে থেকেই গাইডের সাথে পরামর্শ করুন। জুম চালের ভাত, সবজি, ডাল, পাহাড়ি মুরগি, আলু ভর্তা এই ফুড প্যাকেজ অনুযায়ী খাওয়া যাবে। আর সাথে সাথে সব শুকনো খাবার যেমন বিস্কুট, চকলেট, চিড়া, মুড়ি, খেজুর পরিমান ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নিন। পুরো যাত্রার জন্য কঠোর ট্রেকিং প্রয়োজন।

আমিয়াখুম ভ্রমণ খরচ

অমিয়াখুম ভ্রমণে গেলে কয়েক জন একসাথে যেতে হবে। এতে খরচ কমার পাশাপাশি দুর্গম এসব স্থানে ভ্রমণের সাহস যোগাবে। আমিয়াখুম ভ্রমণের প্রধান খরচ হল-
বান্দরবানে আসা - আপনি যেখানেই থাকুন না কেন বান্দরবান শহরে আসতে খরচ। বান্দরবান থেকে থানচি – বান্দরবান থেকে থানচি যেতে আপনাকে জিপ, চান্দের গাড়ি বা বাসে যেতে হবে। রিজার্ভ জিপ/চান্দর কার 5500-6000 টাকা এবং বাস 200 টাকা জন প্রতি। থানচি থেকে রেমাক্রি - থানচি থেকে রেমাক্রি ইঞ্জিন বোটে যাওয়া-আসা 4000-4500 টাকা। একটি নৌকায় ৫-৬ জন বসতে পারে। গাইড খরচ - অমিয়াখুম, ভেলাখুম, সাতভাইখুমের সমস্ত ভ্রমণের জন্য গাইড খরচ 4500-5000 টাকা। খাবারের খরচ - উপজাতীয়দের বাড়িতে খেতে প্রতি খাবার লাগবে 120-150 টাকা। আবাসন খরচ – উপজাতীয় বাড়িতে থাকার জন্য প্রতি রাতে জনপ্রতি 150 টাকা।

ভ্রমণ পরামর্শ

ফিচার ইমেজঃ সিয়াম আনোয়ার

Related Post

শৈলো প্রপাত জলপ্রপাত

শৈলো প্রপাত জলপ্রপাত

শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-থানচি সড়কে অবস্থিত। শৈলপ্রপাত বাংলাদেশের একটি সুপরিচ ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৩ জুন, ২০২৪

জাদিপাই জলপ্রপাত বান্দরবান

জাদিপাই জলপ্রপাত বান্দরবান

জাদিপাই জলপ্রপাত বান্দরবান জেলায় বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং পাহাড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থ ...

শাফায়েত আল-অনিক

২৭ জুন, ২০২৪

দেবতাখুম বান্দরবান

দেবতাখুম বান্দরবান

দেবতাখুম বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। খুম মানে জলাধার। দেবতাখুম মূলত তারাচা খালের একটি অংশ। দুপাশে পাহাড ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৫ আগস্ট, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp anytime or Call our Hotline (10AM - 10PM).