পোখারা শহরে দেখার জন্য অনেক আকর্ষণ রয়েছে। এখানকার সুন্দর স্বচ্ছ হ্রদ মনকে শান্ত করার পাশাপাশি দিগন্তে জোড়া পাহাড়ের দৃশ্য মনকে উদার করে তোলে। আবার এখানকার সুন্দর পরিবেশ দেখার পাশাপাশি পর্যটকরাও নৌকায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। পোখারার দর্শনীয় স্থানগুলি নীচে দেওয়া হল-
ফেওয়া লেক: নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদটি অনেক পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শন করা হয়। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার স্পোর্টস সহ ওয়াটার রাইড উপভোগ করবেন। যেমন ক্যানোয়িং, বোটিং, সাঁতার, পালতোলা, মাছ ধরা এবং কায়াকিং। এছাড়াও এখানে আপনি বিভিন্ন পাখি দেখতে পারেন। এই হ্রদের মাঝখানে বারাহী নামে একটি মন্দির রয়েছে যেখানে প্রতি শনিবার ভক্তরা বরাহকে পশু-পাখি বলি দেন। আর সার্ক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য টিকিটের দাম কম রাখা হয়।
ডেভিস ফল: এই সুন্দর জলপ্রপাতটি পোখরা বিমানবন্দর থেকে মাত্র 2 কিমি দূরে। মূলত ফেওয়া লেকের পানিই এই ঝর্ণার প্রধান উৎস। দাভি নামে এক মহিলা এখানে ডুবে মারা যান এবং তার নামানুসারে বসন্তের নামকরণ করা হয়। এই ঘটনার কারণে, পর্যটকরা রহস্যের সন্ধানে এখানে আসতে পছন্দ করে। তবে বর্ষাকালে এই ঝর্ণাটিকে আরও সুন্দর দেখায়।
গুপ্তেশ্বর মাগদেব গুহা (গুপ্তেশ্বর মগদেব গুহা): এই গুহাটি ডেভিস ফ্রুট এর পাশে অবস্থিত। বাঁকা সিঁড়ি দিয়ে এই গুহার ভিতরে যেতে হয়। এই প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গুহাটিকে শিব লিঙ্গম এর পুরানো আবাস বলে মনে করা হয়। এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের মুখোমুখি হতে হয় এখানে।
জংচুব চোয়েলিং গোম্বা : এই মঠটি পোখরা থেকে আসা তিব্বতি শরণার্থীদের আবাসস্থল। এখানকার মঠটি মূলত তিব্বতি শৈলীতে নির্মিত যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মঠের ভিতরের হলটি প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং স্থাপত্য খুব সুন্দর। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এখানে 7 ফুট লম্বা তামা ও সোনায় মোড়ানো বুদ্ধ মূর্তি যা সবার বিশেষ আকর্ষণ।
সারাওনকোট : সারাওনকোট নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এখান থেকে পোখরা উপত্যকা, অন্নপূর্ণা পর্বত এবং ফেওয়া হ্রদের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। আর এখান থেকে সকালের সূর্যোদয়ের অপূর্ব দৃশ্য যে কেউ উপভোগ করতে পারে। এখানে প্যারাগ্লাইডিং পর্যটকদের পোখরা ভ্রমণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
পোখরা শান্তি স্তূপা (পোখরা শান্তি স্তুপ): বিশ্বের শান্তি প্যাগোডা হিসাবে পরিচিত, এই প্যাগোডা ফেওয়া তাইতে অবস্থিত। সাদা রঙের এই গম্বুজটি মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শান্তির প্রতীক। এই স্তূপে পৌঁছানোর জন্য অনেক পথ রয়েছে যেমন হাইকিং বা বোটিং এবং বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে স্তূপে পৌঁছানো। গৌতম বুদ্ধের জীবনের কিছু মূল্যবান অংশ এখানে চারটি বুদ্ধ মূর্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম: এটি পোখরার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এখান থেকে দেখা যায় তিনটি পর্বতশৃঙ্গ- ধোলাগিরি, অন্নপূর্ণা ও মনসুল। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক নির্মল আনন্দ দেয়। এই জাদুঘরে পাহাড়ের ইতিহাস জানার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যচিত্র দেখে পাহাড়ের ভৌগোলিক অবস্থান, পর্বতে আরোহণের নিয়ম-কানুন এবং পাহাড়ের আশপাশের তথ্যসহ আরও অনেক কিছু সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারবেন। বিশ্ব
গুর্খা মেমোরিয়াল মিউজিয়াম: পোখারার অন্যান্য জাদুঘরের মধ্যে গুর্খা মিউজিয়াম অন্যতম। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে শান্তিরক্ষা মিশনে সাহসী গুর্খাদের (নেপালের জাতীয় সৈনিক) বিভিন্ন ভূমিকা ও অর্জন তুলে ধরা হয়েছে।
মহেন্দ্রো গুহা: এই প্লাইস্টোসিন চুনাপাথরের গুহায় মহেন্দ্র নামে এক রাজা বাস করতেন এবং তাঁর নামেই গুহার নামকরণ করা হয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘেরা এই গুহায় গেলে অনেক ইতিহাস জানা যাবে।
অন্নপূর্ণা প্রজাপতি জাদুঘর: এই ছোট জাদুঘরে আপনি অনেক ছোট প্রজাপতি দেখতে পাবেন। জাদুঘরের অভ্যন্তরের পরিবেশও পর্যটকদের জন্য পছন্দের।
এছাড়াও আপনি পোরাখা ভ্যালি (হিমালয়ান রেঞ্জ এবং লেক এখান থেকে দেখা যায়), অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প, বিদ্যাবাসিনী মন্দির, শ্রী গাদেন ধারগে লিং মঠ, বেগনাস তাল হ্রদ, তাল ভারাহীর মন্দির এবং ব্যাট গুহা (ব্যাট গুহা) দেখতে পারেন। আবার ট্রেকিং করতে চাইলে ঘোড়েপানি পাহাড় ও সেটী গন্ডকি যেতে পারেন।
পোখারার বিশেষ আকর্ষণ: প্যারা গ্লাইডিং, বাঞ্জি জাম্প, ক্যানোয়িং, আল্ট্রা লাইট ফ্লাইট এবং মাউন্টেন ট্রেকিং এখানে পাওয়া যায়।