Komola Ranir Dighi Netrokona

কমলা রানীর দিঘী নেত্রকোনা

Netrokona

Shafayet Al-Anik

·

২৯ নভেম্বর, ২০২৪

কমলা রানীর দিঘী নেত্রকোনা পরিচিতি

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ঐতিহ্যবাহী কমলা রানীর দীঘি অবস্থিত। এটি অনেকের কাছে সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। ঐতিহ্য অনুসারে, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকী নাথ কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। পরোপকারী রাজা জানকী নাথের ঘরে এক পুত্রের জন্ম হয়। শিশুটির নাম রাখা হয় রঘুনাথ। রাজা জানকি নাথ তার প্রজাদের জলের অভাব দূর করার জন্য একটি পুকুর খনন করেন। কিন্তু পুকুরে পানি না উঠায় রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
তারপর এক রাতে রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে, রাণী কমলা দেবী পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পুজো দিলে পুকুর জলে ভরে যাবে। রাণীও প্রজাদের কথা ভেবে পুকুরের মাঝখানে পুজো করতে রাজি হলেন। হঠাৎ চারিদিকে জল উঠে রানি কমলা দেবীকে ডুবিয়ে দিল। অনেকের মতে, বজ্রপাতের কারণে হ্রদের তলদেশের মাটি ফাটল ধরে পানিতে ভরে যায়। এমন ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়েন রাজা জানকি নাথ। রাজার পুত্র রঘুকে নিয়ে সর্বদা চিন্তিত। আবার, এক রাতে রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি যদি শিশু রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে যান তাহলে রাণী কমলা দেবী রঘুনাথকে স্তন্যপান করাতে পারবেন। তবে শর্ত হলো রাজা কোনোভাবেই রানীকে স্পর্শ করতে পারবে না।
রাজা জানকি নাথ তার সন্তানকে রাতে পুকুর পাড়ে রেখে যেতেন। রানী কমলা দেবী শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতেন এবং তারপর জলে মিলিয়ে যেতেন। একদিন রাজা রাণীকে ছুঁতে চাইলেন। কিন্তু রাণী জলে মিশে গেলেন। এরপর থেকে তিনি কখনোই তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে আসেননি।
রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে তার পুত্র রঘুনাথ যদি আরও 7 দিন স্তন্যপান করতে পারে তবে তিনি বিজয়ী এবং গৌরবময় বীর হিসাবে বিবেচিত হবেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা রঘুনাথের রাজত্বকালে সুসং দুর্গাপুর একটি শক্তিশালী পরগনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা রঘুনাথই জঙ্গলবাড়ি দুর্গ আক্রমণ করেন এবং বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়, কেদার রায়কে পরাজিত করেন এবং মুঘল সম্রাটদের দ্বারা মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন।
বর্তমানে সোমেশ্বরী নদী কমলা রানী দীঘির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দীঘির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুকুরের পাড়ের কিছু অংশ বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু অংশ ফসলি জমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরকার ও জিন্নাত পরিবহনের বাস সরাসরি দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই দুটি বাসে দুর্গাপুর যেতে 250 থেকে 350 টাকা লাগে। একে দুর্গাপুর বলা হলেও সাধারণত এসব বাস সুখনগরীতে যায়। সুখনগরী থেকে নৌকায় করে একটি ছোট নদী পার হয়ে রিকশা, বাস বা মোটরবাইকে করে দুর্গাপুর যেতে হয়। আপনি বাসে 20 টাকায়, রিকশায় 80 থেকে 100 টাকায় এবং মোটরসাইকেলে দুইজনে 100 টাকায় দুর্গাপুর যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্যামগঞ্জ স্টেশনে যান এবং সেখান থেকে বাস বা সিএনজি নিয়ে বিরিশিরি বাজারে যেতে পারেন। অথবা একটু সহজে যেতে চাইলে হাওয়ার এক্সপ্রেস ট্রেনে করে নেত্রকোনা ফিরে আসতে পারেন এবং চল্লিশা বাজার থেকে মোটরসাইকেলে ফিরতে পারেন জনপ্রতি ৩০০ টাকা। এ ছাড়া বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল 4.00/4.30 টায় জারিয়া স্টেশনে ট্রেনে করে 80 থেকে 100 টাকায় ট্রলার, অটো, সিএনজি বা মোটরসাইকেলে করে দুর্গাপুর যেতে পারেন।
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে রিকশা বা মোটরসাইকেলে করে বিরিশিরি ব্রিজ পার হয়ে বাঁ দিকে গুজরিকোনার পাকা রাস্তা ধরে ১.৫ কিমি পর কমলা রানী দীঘির পাড়ে।

কোথায় থাকবেন

সুসং দুর্গাপুরে রাত্রি যাপনের জন্য জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস এবং মধ্য-পরিসরের আবাসিক হোটেল রয়েছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - জেলা পরিষদ ডাক বাংলো 0952556015, যুব পুরুষ খ্রিস্টান সমিতির রেস্ট হাউস বা YMCA (01743306230), YWCA গেস্ট হাউস (01711027901), সংখ্যালঘু সাংস্কৃতিক একাডেমি গেস্ট হাউস (1892-822905)
দুর্গাপুরের মধ্য-পরিসরের হোটেলগুলির মধ্যে রয়েছে- স্বর্ণা গেস্ট হাউস (01712284698), হোটেল সুসং (01914791254), বিরিশিরি রিসোর্ট (01974920082), হোটেল জাবা (01711186708, 0175315461708, 0175315461798, গুইলাবনেস্ট হাউস)। এসব হোটেলে 300 থেকে 800 টাকায় রাতারাতি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

কোথায় খাবেন

সব জায়গায় খাবার পাওয়া যায় না বলে বিরিশিরিতে ভ্রমণের সময় হালকা খাবার নিয়ে যেতে পারেন। কিছু মধ্য-পরিসরের খাবার হোটেল বা রেস্তোরাঁ আছে যেখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংসের পাশাপাশি বক পাওয়া যায়। দুর্গাপুর বাজারে নেত্রকোনার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ফিচার ইমেজ: সুলায়মান খান

Related Post

ডিঙ্গাপোতা হাওর নেত্রকোনা

ডিঙ্গাপোতা হাওর নেত্রকোনা

নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ডিঙ্গাপোতা হাওর দেশের অন্যতম বৃহত্তম হাওর। এই হাওরের সৌন্দর্য ঋতুভেদে বিভিন্ন ...

শাফায়েত আল-অনিক

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিরিশিরি দুর্গাপুর

বিরিশিরি দুর্গাপুর

বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বিরিশিরির বিজয়পুরে রয়েছে আকর্ষণীয় চীনামাটি ...

শাফায়েত আল-অনিক

১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সাত শহিদের মাজার

সাত শহিদের মাজার

ফুলবাড়ী নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একটি শান্ত গ্রাম। ভারতের মেঘালয় ...

শাফায়েত আল-অনিক

১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

logo CholoZai

CholoZai is an easier hotel booking platform in Bangladesh, We are trying to making travel simple and accessible for everyone. Choose CholoZai for a hassle free hotel booking experience.

Need Help ?

We are Always here for you! Knock us on Whatsapp (10AM - 10PM) or Email us.